Wireless Communication System(ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম)

0


ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম (Wireless Communication System)


কোন প্রকার তার বা ক্যাবলের বাহ্যিক সংযোগ ব্যবহার না করেই তথ্য আদান প্রদান তথা যোগাযোগ করার পদ্ধতিকে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম বলে। এর সাহায্যে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে অবস্থান করেই একে অন্যের সাথে বিভিন্ন


প্রকার যোগাযোগ যেমন-কথা বলা, টেক্সট ম্যাসেজিং, চ্যাটিং, ইন্টারনেটে ওয়েব ব্রাউজিং ইত্যাদি কাজ খুব সহজেই দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। এতে মোবাইল, বহনযোগ্য টু-ওয়ে রেডিও (Portable two-way radio), পার্সোনাল ডিজিটাল এসিস্ট্যান্ট (Personal Digital Assistant-PDA) এবং তারবিহীন নেটওয়ার্কিং (Wireless networking) ইত্যাদি অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। ওয়্যারলেস বা তারবিহীন প্রযুক্তির অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে জিপিএস ইউনিট (GPS Unit), ওয়্যারলেস কম্পিউটার মাইস, কীবোর্ড, হেডসেট (অডিও), হেডফোন, রেডিও রিসিভার, স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ব্রডকাস্ট টেলিভিশন এবং কর্ডলেস টেলিফোন ইত্যাদি। ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের প্রয়োগে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট কমিউনিকেশন, পয়েন্ট-টু-মাল্টিপয়েন্ট কমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং, সেলুলার নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য তারবিহীন নেটওয়ার্ক সম্পৃক্ত রয়েছে।


ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং এর সাধারণ ব্যবহার/প্রয়োগ-


স্মার্ট ফোন, পিডিএ, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহারকারীগণ যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করেন।

মোবাইল নেটওয়ার্ক, সেলুলার ডেটা সার্ভিস (GSM, CDMA, GPRS, W-CDMA, EDGE, CDMA2000), মোবাইল স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ইত্যাদি। ওয়্যারলেস এনার্জি ট্রান্সফার যা হলো আন্তঃসংযুক্ত তার ব্যবহার না করে বৈদ্যুতিক উৎস থেকে বৈদ্যুতিক লোডে বৈদ্যুতিক শক্তি (Electrical Energy) স্থানান্তরের একটি প্রক্রিয়া।


ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য-


-তারের সাহায্যে প্রথাগত যোগাযোগ পদ্ধতিতে তারের সক্ষমতার দূরত্বগত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই এই সীমাবদ্ধতাকে জয় করা যায়।

-সাধারণ নেটওয়ার্কের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ব্যাকআপ কমিউনিকেশন লিংক (Backup communication link) প্রদান করে।

-স্থানান্তরযোগ্য অথবা ক্ষণস্থায়ী ওয়ার্ক স্টেশনকে সংযুক্ত করে।

-সাধারণ ক্যাবলিং করা যেখানে দুরূহ বা অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব সে সকল পরিস্থিতিতে ওয়‍্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত।

-প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ব্যবহারকারী বা নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে।

ওয়্যারলেস কমিউনিকেশনের প্রয়োজনীয়তা


ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে বেশ কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই সিস্টেম বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিম্নে এরূপ কয়েকটি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো- 

১। যেসব স্থানে খুব দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে হয় (বিশেষতঃ যুদ্ধ ক্ষেত্রে, দুর্যোগকালে) সেখানে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম সবচাইতে উপযোগী সমাধান।


২। চলমান কোন ব্যক্তির ডেটা কমিউনিকেশনের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমেই যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থার উদ্ভবের ফলে মানুষ সবসময় ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকতে চায়। এমনকি চলার পথেও মানুষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চায় বা পাঠাতে চায়। আর এটা সম্ভব হয় কেবলমাত্র ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে।


৩ । ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম কোনো ডেটা পাঠানোর সময় মুক্ত মাধ্যমে তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করে। যেকোন যন্ত্র এই বিকিরণ থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। অর্থাৎ যে কোন ডেটা পাঠানোর সময় সকলকেই পাঠানো হয়। তাই বলা যাই ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন প্রাকৃতিকভাবেই সম্প্রচার বা ব্রডকাস্ট করে থাকে। অর্থাৎ ব্রডকাস্ট বা সম্প্রচার জাতীয় অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহার সবচেয়ে * ফলপ্রসু।


৪। যে কোনো সাইট থেকে সরাসরি কোন ভিডিও সম্প্রচার করতে চাইলে সেখানে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির আশ্রয় নেওয়া হয়।


৫। যে কোন চলমান যানের পর্যবেক্ষণ এবং তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ট্যাক্সি ক্যাবগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে যোগাযোগের জন্য শহরজুড়ে একটি কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয়।


৬। উড়োজাহাজ চালনায় সবসময় ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের সাথে যোগাযোগ স্থাপন। করা হয়। উড়োজাহাজের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো উহার ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম।


৭। মোবাইল ফোন ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেমে বড় প্রয়োগ।


৮। বাসা বাড়িতে বিভিন্ন ইলেকট্রিকাল এবং ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যে কোনো স্থান থেকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য ওয়‍্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে রিমোট কন্ট্রোল যন্ত্রের মাধ্যমে কয়েক মিটার দূরত্বে অবস্থিত যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।


৯। তার দিয়ে সংযোগ করতে গেলে অনেক সময় বিল্ডিং ভাঙ্গতে হয় এবং তাতে বিল্ডিং এরও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। সে সমস্ত ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস সিস্টেম একটি উপযুক্ত সমাধান।


১০। বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় নমুনাগুলো (যেমন-তিমি মাছ, বন্য হাতী) থেকে ডেটা সংগ্রহের জন্য নমুনার সাথে একটি সেন্সর সংযুক্ত করা হয়। এই সেন্সরে একটি ছোট অ্যান্টেনা থাকে যার মাধ্যমে ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন করা হয় এবং ডেটা পাঠানো হয়।


ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট (Wireless internet access point)


বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, এয়ারপোর্ট বা পাবলিক কোন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট ব্যবহৃত হয়। ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট ব্যবহার করে নেটবুক, নোটবুক বা ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন, পিডিএ, ট্যাব ইত্যাদিতে উপযুক্ত ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক কার্ড বা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাডস্টারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে দুই ধরনের ওয়্যারলেস ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট দেখা যায়। যথা-


১। হটস্পট (Hotspot)

২। মোবাইল নেটওয়ার্ক (mobile networks)।


 হটস্পট (Hotspot)


হটস্পট (Hotspot) হলো এক ধরনের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক যা মোবাইল কম্পিউটার ও ডিভাইস যেমন-স্মার্ট ফোন, পিডিএ, ট্যাব, নেটবুক, নোটবুক বা ল্যাপটপ ইত্যাদিতে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে বর্তমানে জনপ্রিয় তিনটি হটস্পট প্রযুক্তি হলো-


১। ব্লুটুথ (Bluetooth)

২। ওয়াই-ফাই (Wifi) ও

৩। ওয়াই ম্যাক্স (WiMax)।


(Bluetooth)ব্লুটুথ 


 ব্লুটুথ হচ্ছে তারবিহীন পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN) প্রটোকল যা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে স্বল্প দূরত্বে ডেটা আদান-প্রদান করে এর দূরত্ব সাধারণত ১ থেকে ১০০ মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে ল্যাপটপ, ট্যাব, পিডিএ, স্মার্ট ফোন ইত্যাদি ডিভাইসে ব্লুটুথ বিল্ট ইন আকারে থাকে। তাছাড়া ইউএসবি ব্লুটুথ অ্যাডাপ্টারের সাহায্যে যে কোন কম্পিউটারে ব্লুটুথ সক্রিয় করা যায়। এটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় ডেটা কমিউনিকেশন প্রটোকল। এর ডেটা ট্রান্সফার রেট প্রায় ১ মেগাবিট/সেকেন্ড বা তার চেয়ে বেশি। ব্লুটুথ ব্যবহার করে একই সাথে একাধিক ডিভাইসের সংযোগ দেওয়া যায়। এটি রেডিও ওয়েভ ২৪০০.০ MHz থেকে ২৪৮৩.৫ MHz ফ্রীকুয়েন্সী ব্যান্ডে কাজ করে। এ যাবৎ ব্লুটুথের অনেক ভার্সন বাজারে বের হয়েছে। বর্তমানে ব্লুটুথ ভার্সন ৪.০ বিদ্যমান এবং তা ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ১৯৪৫ এরিকসন (Ericsson) এই প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন এবং দশম শতাব্দীর ডেনমার্কের রাজা হারাল্ড ব্লু-টুথের নামানুসারে নামকরণ করেন। 

এটি আইইইই (IEEE) ৮০২.১৫ স্ট্যান্ডার্ড নামে পরিচিত।

Bluetooth version ----Data rate 

1.2 ---- 1Mbit/s

2.0+EDR ---- 3 Mbit/s

3.0+HS ---- 24 Mbit/s

4.0 ---- 24 Mbit/s


ব্লুটুথ নেটওয়ার্কের গঠন ও কার্যপ্রণালী-


ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে রেডিও ফ্রীকুয়েন্সী ২.৪ GHz থেকে

২.৪৮৩৫ GHz ব্যান্ডে ডেটা চলাচল করে। ব্লুটুথ

প্রযুক্তির সাহায্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তার। মৌলিক উপাদান হলো পিকোনেট (Piconet) পিকোনেটে কোন একটি মুহুর্তে একটি মাস্টার (Master) নোড ও সর্বাধিক ৭টি সক্রিয় দাস (Slave) নোড থাকতে পারে। তবে একটি পিকোনেটে মোট ২৫৫টি দাস নোড থাকতে পারে যার মধ্যে ৭টি ব্যতীত অন্যসবগুলো নিষ্ক্রিয় হিসাবে থাকে। পাশাপাশি দুটি পিকোনেট একটি সাধারণ দাস নোডের মাধ্যমে সংযুক্ত হলে এই দুটি পিকোনেটকে একসাথে স্ক্যাটারনেট (Scatternet) বলা হয়। স্ক্যাটরনেটে দুইয়ের অধিক পিকোনেট সংযুক্ত হতে পারে। এই সংযোগকারী দাস নোডকে ব্রিজ বলা হয়।

যেকোন দাস নোড কেবলমাত্র মাস্টারনোডের সাথেই যোগাযোগ করতে পারে। দাস নোডে একটি ছোট এন্টেনা থাকে যা ২.৪ GHz ব্যান্ডে সিগন্যাল আদান-প্রদান করতে পারে। মাস্টার নোড তার অধীনস্থ দাস নোডকে বিভিন্ন টাইম স্লট/স্লাইস বরাদ্দ করে এবং সেই মোতাবেক দাস নোডগুলো ডেটা পাঠায়।


ব্লুটুথের সুবিধাসমূহ-


•স্বল্প পরিসরের যোগাযোগের জন্য উৎকৃষ্ট।

•পৃথিবীর সকল ব্লুটুথ ডিভাইস একই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করায় এটি সকল ব্লুটুথ ডিভাইসের জন্য ব্যবহারযোগ্য।

•এটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। ডিভাইস সংযুক্ত করার সাথে সাথেই কাজ করে।

• বিদ্যুৎ খরচ খুবই কম।

• ডিভাইসগুলোর যোগাযোগ রেখায় কোন বাঁধা থাকলে কোন অসুবিধা হয় না।

•নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হলে পাসওয়ার্ডও ব্যবহার করা যায়।


ব্লুটুথের অসুবিধাসমূহ-


•সীমিত ব্যান্ডউইডথ্।

•নেটওয়ার্কের পরিসর খুবই কম।


ব্লুটুথের ব্যবহার/প্রয়োগ-


•স্মার্ট ফোন, ডেস্কটপ/ল্যাপটপ/পামটপ ইত্যাদি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসের সাথে যোগাযোগের করার জন্য

•ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মেডিক্যাল ডিভাইসের সেন্সরের সাথে যোগাযোগের জন্য।


ওয়াই-ফাই (Wi-Fi)


ওয়াই-ফাই বা ওয়্যারলেস ফিডালিটি (Wireless Fidelity-Wifi) হচ্ছে এমন একটি জনপ্রিয় তারবিহীন প্রযুক্তি যা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদান করতে পারে। এটি প্রযুক্তিগতভাবে আইইইই ৮০২.১১বি (IEEE 802.11B) স্ট্যন্ডার্ড নামে পরিচিত। ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি স্ট্যান্ডার্ড ইথারনেট এবং অন্যান্য সাধারণ তার ভিত্তিক ল্যান প্রযুক্তি থেকে অপেক্ষাকৃত দ্রুত (১১ এমবিপিএস) এবং কম ব্যয়বহুল। এভাবে, ওয়াই-ফাই তারবিহীন ল্যানে ল্যাপটপ পিসি, পিডিএ, স্মার্ট ফোন, ট্যাব এবং অন্যান্য ডিভাইসের সাথে ওয়াই-ফাই মডেমের সংযোগ করে দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসা, পাবলিক এবং গৃহে খুব সহজেই ইন্টারনেট এবং অন্যান্য নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করে। এর একটি দ্রুততর সংস্করণ হলোআইইইই ৮০২.১১ জি (IEEE 802.11G) যার গতি ৫৪ এমবিপিএস। বর্তমানে এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।


ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধাসমূহ-


•ওয়াই-ফাই তুলনামূলকভাবে সস্তা। প্রত্যন্ত অঞ্চল, ঐতিহাসিক ভবন ইত্যাদি জায়গা যেখানে তার বা ক্যাবল ব্যবহারের সুযোগ নেই সে সকল জায়গায় ওয়াই-ফাই খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। 

•প্রস্তুতকারীগণ বর্তমানে প্রায় সকল ডিভাইস (কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ইত্যাদি) তারবিহীন নেটওয়ার্কের সাথে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী করে নির্মাণ করছেন। ফলে প্রায় সকল ডিভাইসে এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নেটওয়ার্কিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

• ওয়াই-ফাই পণ্যসমূহ ওয়াই-ফাই এলায়েন্স (Wi-Fi Alliance) কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত।

•যে কোন মানের ওয়াই-ফাই বিশ্বের যে কোন জায়গায় কাজ করবে।

•ওয়াই-ফাইয়ের বর্তমান সংস্করণ ব্যাপকভাবে নিরাপদ বলে গণ্য করা হয়।

•মানসম্পন্ন সেবার নতুন প্রোটোকল ভয়েস ও ভিডিও প্রয়োগে ওয়াই-ফাইকে আরো যথাযথ করে তুলেছে।

• বিদ্যুৎ সাশ্রয় পদ্ধতি ব্যাটারির পরিচালনা কার্যক্রমকে আরো উন্নত করেছে।

•উপযুক্ত ডিভাইস সংযোগের মাধ্যমে বর্তমানে ওয়াই-ফাইয়ের সাহায্যে চলমান অবস্থায় কাজ করা যায়। যেমন- গাড়ীতে করে এক জায়গা থেকে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার সময় ওয়াই-ফাইয়ের সাহায্যে কাজ করা যায়।


ওয়াই-ফাইয়ের অসুবিধাসমূহ-


•এর ডেটা স্থানান্তর বেশ ধীরগতি সম্পন্ন।


•নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া অন্যান্য জায়গায় এর কাভারেজ পাওয়া কঠিন।


•ডেটার নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়।


•নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই।


ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিরাপত্তায় করণীয়-


•ওয়াই-ফাই রাউটারের ডিফল্ট (ফ্যাক্টরি থেকে যে অবস্থায় আসে সেই অবস্থা) সেট আপ পরিবর্তন করা। যেমন- admin লগইন ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। পাসওয়ার্ডহীন অবস্থায় থাকলে পার্শ্ববর্তী যে কেউ এই ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারে। ফলে নেটওয়ার্ক ও ডেটা উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক যেমন এয়ারপোর্ট, শপিংমল ইত্যাদিতে কোন পাসওয়ার্ড দেওয়া হয় না। এটি সাধারণত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে পার্সোনাল বা বাসা-বাড়ির ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের অবাঞ্চিত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাসওয়ার্ড দেওয়া যেতে পারে।

•ওয়াই-ফাই রাউটারের Service Set Identifier (SSID) ব্রডকাস্ট নিষ্ক্রিয় করা। ফলে নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা ডিভাইসগুলোতে ব্যবহৃত ওয়াই-ফাই রাউটারের পরিচয় প্রকাশিত হবে না।

•ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের আওতায় প্রতিটি ডিভাইসে ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডের Machine Access Code (MAC) ব্যবহৃত রাউটারে সক্রিয় করা। ফলে অজানা MAC বিশিষ্ট ডিভাইস থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে না।

•ওয়াই-ফাই রাউটারের এনক্রিপশন সক্রিয় করা ইত্যাদি।


ওয়াই ম্যাক্স(WiMax)


ওয়াই ম্যাক্স শব্দটি ২০০১ সালের জুন মাসে ওয়াই ম্যাক্স ফোরাম কর্তৃক গঠিত হয়। এর পূর্ণরূপ হলো Worldwide Interoperability for Microwave Access (WiMax)। ওয়াই ম্যাক্স হচ্ছে একটি যোগাযোগ প্রযুক্তি যা বিস্তৃত ভৌগলিক অঞ্চলে দ্রুত গতির তারবিহীন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে বর্তমানে এটি আইইইই-৮০২.১৬

(IEEE- 802.16) স্ট্যান্ডার্ড নামে পরিচিতি।

২০০৫ সালে ওয়াই ম্যাক্স রিভিশন ৪০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত বিট রেট প্রদান করে যা ২০১১ সালে তাত্ত্বিকভাবে ১ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত প্রদান করতে সক্ষম হয়। কার্যতঃ ওয়াই-ম্যাক্স ৭৫ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার রেট প্রদান করে যা সাধারণ ক্যাবল-মডেম (Cable-Modem) এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত। একে চতুর্থ জেনারেশনের মোবাইল প্রযুক্তির অংশ বা তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তির 4G ও বলা হয়।


ওয়াই ম্যাক্সের সুবিধাসমূহ-


•ব্যবহারকারী ও ওয়াই ম্যাক্সের বেজ স্টেশনের মধ্যে দৃষ্টিরেখা বা "Line-of-sight" প্রয়োজন নেই।


•বিভিন্ন রকম ডিভাইসের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে।


•কোন ভৌগলিক অঞ্চলের সর্বত্র ব্রডব্যান্ড নিশ্চিত করতে ক্যাবল (Cable) ও ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইনের (Digital Subscriber Line) তারবিহীন বিকল্প পদ্ধতি হলো ওয়াই ম্যাক্স। 

•ডেটা আদান প্রদান, টেলিযোগাযোগ (Voice Over Internet Protocol-VOIP) এবং আইপি টিভি সার্ভিস (ট্রিপল প্লে) ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে। 

•ধারাবাহিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যবসাক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগে সহায়তা প্রদান করে।

•স্মার্ট গ্রীডস (Grids) এবং মিটারিং (Metering) বিদ্যমান।

•অন্যান্য নেটওয়ার্কের তুলনায় খরচ অপেক্ষাকৃত কম।

•স্পেকট্রাল কর্মদক্ষতা যথেষ্ট ভাল।

•ওয়াই ম্যাক্স সেলুলার ফোনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে যার সামগ্রিক ধারণ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি।


ওয়াই ম্যাক্সের অসুবিধাসমূহ-


•ওয়াই ম্যাক্স ৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে কার্যত ৭০ মেগাবিট/সেকেন্ড এর বেশি গতি প্রদান করতে পারে না। দূরত্ব বাড়তে থাকলে অতিরিক্ত বেস স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে খরচ বেড়ে যায়।

•একটি একক সেক্টরে একাধিক সক্রিয় ব্যবহারকারী থাকলে পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়।

•দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সিগন্যাল সমস্যা দেখা দেয়।

•এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি।

•অধিক বিদ্যুতের প্রয়োজন বিধায় বিদ্যুৎ খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি।



Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)