Virtual Reality (ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি)

0


ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি (Virtual Reality)

ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি (Virtual Reality) বা VR হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম যাতে মডেলিং (Modelling) ও অনুকরণবিদ্যার (Simulation) প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন বা উপলব্ধি করতে পারে। ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে অনুকরণকৃত পরিবেশ হুবহু বাস্তব পৃথিবীর মত হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় অনুকরণকৃত বা সিম্যুলেটেড পরিবেশ বাস্তব থেকে আলাদা হতে পারে। যেমন- ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি গেমস।


ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে ব্যবহারকারী সম্পূর্ণরূপে একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তথ্য আদান প্রদানকারী বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সম্বলিত চশমা, headsets, gloves, suit ইত্যাদি পরিধান করার মাধ্যমে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটিতে বাস্তবকে উপলব্ধি করা হয়। একটি typical VR format -এ একজন ব্যবহারকারী স্টেরিওস্কোপিক (stereoscopic) বা ত্রিমাত্রিক স্ক্রীন সম্বলিত একটি হেলমেট পরে এবং তার মধ্যে দিয়ে বাস্তব থেকে অনুকরণকৃত অ্যানিমেটেড বা প্রাণবন্ত ছবি দেখে। Telepresence বা কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক জগতে উপস্থিত থাকার ভ্রমণ একটি গতি নিয়ন্ত্রণকারী সেন্সর দ্বারা প্রভাবিত করা হয়। গতি নিয়ন্ত্রণকারী সেন্সর এর মাধ্যমে স্ক্রীন এ প্রদর্শিত ছবির গতিকে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির সাথে মেলানো হয়। যখন ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির পরিবর্তন হয় তখন স্ক্রীন এ প্রদর্শিত দৃশ্যের গতিও পরিবর্তিত হয়। এভাবে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারী কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক জগতের সঙ্গে মিশে যায় এবং সেই জগতের একটি অংশে পরিণত হয়। আবার force-feedback সম্বলিত data gloves পরিধান করলে তা স্পর্শের অনুভূতি প্রদান করে এবং এসময় ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছানুযায়ী ভার্চুয়্যাল পরিবেশের কোন বস্তু তুলতে বা ধরতেও তা ব্যবহার করতে পারে।

প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি এর প্রভাব(Impact of Virtual reality into daily life):


বর্তমান সময়ে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি সবেমাত্র কুঁড়ি মেলতে শুরু করেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামীতে প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রচণ্ড প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যতে যখন ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে যাবে তখন তা বিনোদন থেকে শুরু করে যোগাযোগ পর্যন্ত প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হবে। বিভিন্ন পেশা ও গবেষণায় ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির প্রয়োগের ফলে সমাজে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক, উভয় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।


• চিকিৎসাক্ষেত্রে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের ভুল ও ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যেমন-সিম্যুলেটেড


সার্জারির মাধ্যমে নতুন ডাক্তার ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। আবার সিম্যুলেটেড রোগীর উপর নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোও সম্ভব।


সামরিক বাহিনীতে অনেক বছর যাবৎ মিলিটারি প্রশিক্ষণে ফ্লাইট সিম্যুলেটর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রচলিত ফ্লাইট সিম্যুলেটর এর আরও উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এছাড়াও ভার্চুয়্যাল


রিয়েলিটির মাধ্যমে সিম্যুলেটেড ওয়ার দ্বারা সৈন্যদের অনেক বেশি বাস্তব ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে। ব্যবসা বাণিজ্যেও ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা সম্ভব। ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীকে ফাইল কেবিনেট দিয়ে কম্পিউটার ডেস্কটপে তথ্য খুঁজতে হবে না। ব্যবহারকারী নিজেই ফাইল ড্রয়ার খুলতে পারবে এবং নিজের হাতে ফাইলগুলো সাজাতে পারবে।


ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির সরঞ্জামাদির চড়া দাম ও জটিলতা হচ্ছে বর্তমানে বিজ্ঞানীদের প্রধান দু'টি সমস্যা। যেমন-কখনও কখনও headset-এর গতি ব্যবহারকারীর স্বাভাবিক গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারেনা।


বর্তমান সমাজের মনুষ্যত্বহীনতা বা ডিহিউম্যানাইজেশন (Dehumanization) ইস্যুটি হচ্ছে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির আরও একটি নেতিবাচক দিক। পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকে মনুষ্যত্বকে ধরে রাখতে হবে এবং একই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা প্রযুক্তি দ্বারা চালিত না হই। কিন্তু যদি বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তাহলে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। কারণ মানুষ তখন ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি দ্বারা বাস্তব জীবনের চেয়েও অনেক ভালো সঙ্গী এবং মনের মত পরিবেশ পাবে। আর মানুষ যদি এভাবে goggles আর gloves কে মানুষ ও সমাজের বিকল্প হিসেবে বেছে নেয় তাহলে মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে আর বেশি সময় লাগবে না।


ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমত বিচরণ করতে পারবে। ফলে দেখা যাবে মানুষ বেশিরভাগ সময় কাটাবে কল্পনার জগতে এবং খুব কম সময় থাকবে বাস্তব জগতে। কিন্তু এভাবে যদি মানুষ


কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারে তাহলে এই পৃথিবী চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হানিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি

ও শ্রবণশক্তির ক্ষতিসাধন করে।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)