Network Topology (নেটওয়ার্ক টপোলজি)

0


নেটওয়ার্ক টপোলজি (Topology): 


কম্পিউটার নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটারের সাথে অপর কম্পিউটারের সংযোগ ব্যবস্থাকেই Topology বলে। তবে নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলোকে তার দিয়ে যুক্ত করলেই হয় না। তারের ভিতর দিয়ে নির্বিঘ্নে ডেটা যাওয়া আসার জন্য যুক্তি নির্ভর সুনিয়ন্ত্রিত একটি পথের প্রয়োজন আছে। নেটওয়ার্কের কম্পিউটারগুলোকে তারের মাধ্যমে যুক্ত করার যে নকশা এবং এর পাশাপাশি সংযোগকারী তারের ভিতর দিয়ে ডেটা যাওয়া আসার জন্য যুক্তি নির্ভর পথের যে পরিকল্পনা এ দু'য়ের সমন্বিত ধারণাকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টোপোলজি। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাধারণত নিম্নলিখিত সংগঠন ব্যবহার করা যায়-


১। স্টার নেটওয়ার্ক (Star Network)

২। রিং নেটওয়ার্ক (Ring Network)

৩। বাস নেটওয়ার্ক (Bus Network) 

৪। ট্রি নেটওয়ার্ক (Tree Network) ও

৫। মেশ (Mesh) বা পরস্পরে সংযুক্ত নেটওয়ার্ক

৬। হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network)।


স্টার নেটওয়ার্ক (Star Network)


স্টার নেটওয়ার্কে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি হাব (HUB) বা সুইচের (Switch) মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত থাকে। মাইক্রোকম্পিউটারগুলি হাবের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ও ডেটা আদান-প্রদান করে।


স্টার টপোলজির সুবিধাসমূহ-


১। নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার নষ্ট হলেও নেটওয়ার্কের বাকি কম্পিউটারগুলোর মধ্যে কাজের ব্যাঘাত ঘটে না। 

২। হাব বা সুইচ ছাড়া নেটওয়ার্কের অন্য কোন অংশের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নেটওয়ার্ক সচল থাকে।

৩। একই নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা যায়।

৪। স্টার নেটওয়ার্কে কোন কম্পিউটার যোগ করা বা বাদ দেওয়া যায়, তাতে কাজের কোন বিঘ্ন ঘটে না। ৫। কেন্দ্রীয়ভাবে নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ বা সমস্যা নিরূপণ সহজ। ইনটেলিজেন্ট সুইচ ব্যবহার করলে এর সাহায্যে নেটওয়ার্কের কর্মকান্ড তথা ওয়ার্কলোড মনিটরিং করা যায়।


স্টার টপোলজির অসুবিধাসমূহ-


১। কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হাব বা সুইচ খারাপ হয়ে গেলে সমস্ত নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়ে। কারণ পুরো নেটওয়ার্ক হাবের মাধ্যমেই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

২। স্টার টপোলজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাবল ব্যবহৃত হয় বিধায় এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।


রিং নেটওয়ার্ক (Ring Network)


রিং নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলো নোড (কম্পিউটার যে বিন্দুতে যুক্ত থাকে তাকে নোড বলে) এর মাধ্যমে বৃত্তাকারপথে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার ডেটা বা তথ্য (সংকেত) পাঠালে তা পরবর্তী নোডের দিকে প্রবাহিত করে। এভাবে তথ্যের একমুখী প্রবাহ পুরো বৃত্তাকার পথ ঘুরে আসে এবং বৃত্তাকার পথের বিভিন্ন নোডে সংযুক্ত কম্পিউটার প্রয়োজনে উক্ত সংকেত গ্রহণ করতে পারে।


এ ধরনের সংগঠনে কম্পিউটারগুলো সরাসরি পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে না বিধায় নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার অন্য যে কোন কম্পিউটারে সরাসরি সংকেত পাঠাতে পারে না। এজন্য নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার সংকেত পুনঃপ্রেরণের ক্ষমতা হারালে কিংবা খারাপ হয়ে গেলে অথবা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলে, পুরো নেটওয়ার্কটি অকেজো হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে খারাপ কম্পিউটারটি অপসারণ করে পুনরায় সংযোগ সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়া নতুন যন্ত্রপাতি সংযোগের জন্য নতুন নোড সৃষ্টি করতে হয়। নতুন নোডকে রিং ভেঙে দুটি পাশাপাশি নোডের সাথে যুক্ত করতে হয়।


রিং টপোলজি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ-


১। যেহেতু নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটি কম্পিউটার ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য সমান অধিকার পায় তাই ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য নেটওয়ার্কে কোন কম্পিউটারই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না।

২। নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বাড়লেও এর দক্ষতা খুব বেশি প্রভাবিত হয় না।

৩। নেটওয়ার্কে কোন সার্ভার কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় না।


রিং টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ-


১। রিং নেটওয়ার্কে একটি মাত্র কম্পিউটার সমস্যায় আক্রান্ত হলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়বে।

২। রিং টপোলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা নিরূপণ বেশ জটিল।

৩। নেটওয়ার্কে কোন কম্পিউটার যোগ করলে বা সরিয়ে নিলে তা পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ব্যাহত করে।

৪। এই নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়লে ডেটা ট্রান্সমিশনের সময়ও বেড়ে যায়।

৫। রিং টপোলজির জন্য জটিল নিয়ন্ত্রণ সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়।


বাস নেটওয়ার্ক (Bus Network)


বাস নেটওয়ার্ক সংগঠনে একটি সংযোগ লাইনের সাথে সবগুলি নোড যুক্ত থাকে। সংযোগ লাইনকে সাধারণত বাস বলা হয়। একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটার নোডের সংযোগ লাইনের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। অন্যান্য কম্পিউটারগুলি তাদের নোডে সেই সংকেত পরীক্ষা করে এবং কেবলমাত্র প্রাপক নোড সেই সংকেত গ্রহণ করে। নিচে একটি বাস নেটওয়ার্ক দেখানো হলো-


বাস টপোলজি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ-


১। বাস নেটওয়ার্কের কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে অন্য কম্পিউটারের কাজ করতে কোন অসুবিধা হয় না। সহজেই কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হতে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব।

২। নেটওয়ার্কের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করতে এই টপোলজিতে সবচেয়ে কম ক্যাবল প্রয়োজন হয়, ফলে এতে খরচও সাশ্রয় হয়। 

৩। নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন বা বাস সহজে সম্প্রসারণ করা যায়। দুটো পৃথক ক্যাবলকে একটি বিএনসি ব্যারেল আরও অধিক সংখ্যক কম্পিউটারকে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়।

৪। এই টপোলজিতে বাস সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনে রিপিটারও ব্যবহার করা হয়। রিপিটার সিগন্যালের মান

বাড়িয়ে দেয় এবং তা আরও লম্বা দূরত্ব অতিক্রমে সমর্থ হয়।

৫ । বাস নেটওয়ার্কে কোন নোড (কম্পিউটার, প্রিন্টার বা অন্য কোন যন্ত্রপাতি) যোগ করলে বা সরিয়ে নিলে তাতে

পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।


বাস টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ-


১। নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংখ্যা বেশি হলে প্রচন্ড ট্রাফিক সৃষ্টি হয় এবং ডেটা ট্রান্সমিশন বিঘ্নিত হয়।

২। এই টপোলজিতে ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য কোন সমন্বয়ের ব্যবস্থা নেই। যে কোন কম্পিউটার যে কোন সময়ে ডেটা ট্রান্সমিশন করতে পারে। এর ফলে নেটওয়ার্কের প্রচুর ব্যান্ডউইডথ নষ্ট হয়। এই ব্যবস্থা ডেটা ট্রান্সমিশনের পরিবর্তে কম্পিউটারগুলো একে অপরকে বাধা দিতে বেশি সময় নষ্ট করে।

৩। সংযুক্ত দুটো ক্যাবলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সংযোজক ডিভাইস ব্যারেল কানেক্টর ক্যাবলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডেটা সিগন্যালকে দুর্বল করে দেয়।

৪। বাস টপোলজি সৃষ্ট সমস্যা নির্ণয় তুলনামূলক বেশ জটিল। বাসের একটি মাত্র স্থানে সৃষ্ট ত্রুটি বা ব্রেক (Break) পুরো নেটওয়ার্ককে অচল করে দেয়।


মেশ বা পরস্পর সংযুক্ত নেটওয়ার্ক (Mesh Netwok)


মেশ টপোলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের অধীনস্থ প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে কোন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।


মেশ টপোলজি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ-


১। যে কোন দুইটি নোডের মধ্যে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সংকেত আদান-প্রদান করা যায়।

২। কোন কম্পিউটার বা সংযোগ লাইন নষ্ট হয়ে গেলে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। অর্থাৎ সহজে নেটওয়ার্কে খুব বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় না।

৩। এতে ডেটা কমিউনিকেশনে অনেক বেশি নিশ্চয়তা থাকে।

৪। নেটওয়ার্কের সমস্যা খুব সহজে সমাধান করা যায়।

৫। অবকাঠামো অনেক শক্তিশালী।


মেশ টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ-


১। এই টপোলজিতে নেটওয়ার্ক ইনস্টলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল।

২। সংযোগ লাইনগুলির দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় খরচ বেশি হয়। তাছাড়া নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত লিংক স্থাপন করতে হয় ।


ট্রি নেটওয়ার্ক (Tree Network)


মূলত স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত রূপই হলো ট্রি টপোলজি। এই টপোলজিতে একাধিক হাব (HUB) ব্যবহার করে সমস্ত কম্পিউটারগুলোকে একটি বিশেষ স্থানে সংযুক্ত করা হয় যাকে বলে রুট (Root)। সেখানে তাদের সংকেত পাঠানোর গতি বৃদ্ধির জন্য উচ্চ গতি বিশিষ্ট সংযোগ দ্বারা কম্পিউটারের সাথে সার্ভার যুক্ত করা হয়।


ট্রি সংগঠনে এক বা একাধিক স্তরের কম্পিউটার হোস্ট কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারের


সাথে আবার তৃতীয় স্তরের কম্পিউটার যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারের হোস্ট হিসেবে কাজ করে।


ট্রি টপোলজি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ-


১। নতুন ব্রাঞ্চ সৃষ্টির মাধ্যম ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বেশ সুবিধাজনক।

২। অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ নেটওয়ার্কের গঠন বেশি উপযোগী।

৩ । নতুন কোন নোড সংযোগ করা বা বাদ দেওয়া সহজ। এতে নেটওয়ার্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।


ট্রি টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধাসমূহ-


১। রুট বা সার্ভার কম্পিউটারে কোন ত্রুটি দেখা দিলে ট্রি নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যায়।

২। অন্যান্য টপোলজির তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল।


হাইব্রিড নেটওয়ার্ক (Hybrid Network)


স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয় তাকে হাইব্রিড নেটওয়ার্ক বলে। ইন্টারনেট একটি হাইব্রিড নেটওয়ার্ক কেননা এতে প্রায় সব ধরনের টপোলজির নেটওয়ার্কই সংযুক্ত আছে। হাইব্রিড নেটওয়ার্কের সুবিধা ও অসুবিধা নির্ভর করছে ঐ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত টপোলজিগুলোর উপর।


হাইব্রিড নেটওয়ার্কের সুবিধাসমূহ-


১. নেটওয়ার্ককে প্রয়োজনে আরও বৃদ্ধি করা যায়।

২. নেটওয়ার্কের কোন সমস্যা নির্ণয় করা সহজ।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)