ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology)
ন্যানোপ্রযুক্তি হচ্ছে পারমাণবিক বা আণবিকমাত্রার কার্যক্ষম প্রকৌশল শাস্ত্র যা কোন ডিভাইস বা সিস্টেমের কাজ এবং এর আরও উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। Merriam Webster অনলাইন ডিকশনারী অনুসারে ন্যানোটেকনোলজি হলো-"the science of manipulating materials on an atomic or molecular scale especially to build microscopic devices (as robots)" অর্থাৎ ন্যানোপ্রযুক্তি হলো পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব ও বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান। একটি উপাদানের গোড়ার দিকের আবিষ্কার থেকে বর্তমানে উন্নয়নকৃত পদ্ধতি এবং সামগ্রী ব্যবহার করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পণ্য বা উপাদান তৈরির জন্য ন্যানোপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়।
ন্যানোমিটার হচ্ছে দের্ঘ্য পরিমাপের একটি একক। এক ন্যানোমিটার হচ্ছে এক মিটারের একশত কোটি ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ১ ন্যানোমিটার (1nm) 10" মিটার (m)। যদি ইঞ্চির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে ২৫,৪০০,০০০ ন্যানোমিটারে এক ইঞ্চি। আরও ছোট কোন বস্তুর সাথে তুলনা করার জন্য চুলের সাথে তুলনা করা যায়। একটি চুল হচ্ছে এক লক্ষ ন্যানোমিটার প্রশস্থ অথবা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার সাথে তুলনা করলে, সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার আকার ২০০ ন্যানোমিটার। ডিএনএ ডাবল-হেলিক্স এর ব্যাসার্ধ প্রায় ২ ন্যানোমিটিার। একটি স্বর্ণের পরমাণুর আকার হচ্ছে ০.৩ ন্যানোমিটার। কার্বন-কার্বন বন্ধনের অনুতে পরমাণুগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব ০.১২ থেকে ০.১৫ ন্যানোমিটার। নিচের চিত্রটিতে ন্যানো স্কেলের কিছু বস্তুর উদাহরণ দেওয়া হলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমিটার স্কেলে যন্ত্রপাতির সুক্ষতা মাপা হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলো। ট্রানজিষ্টরের আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে সেমিকন্ডাক্টর তার পথযাত্রা শুরু করল এবং ইহা পরিমাপ শুরু হলো মাইক্রোটেকনোলজিতে। আর মাইক্রো টেকনোলজির পরবর্তী ধাপই হলো ন্যানো টেকনোলজি। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমন-রেডিও, টেলিভিশন, ফ্রিজ ইত্যাদি আরও কীভাবে ছোট করা যায় তার প্রচেষ্ঠা চলতে থাকে। সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত প্রযুক্তির কল্যাণে এই প্রচেষ্ঠা সফল হতে শুরু করে। এই সফলতার ধারাবাহিকতায় এখন বাজারে দেয়ালে ঝুলানোর জন্য ক্যালেন্ডারের মত পাতলা টেলিভিশন পাওয়া যায়।
স্কেনিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপের অভূতপূর্ব আবিষ্কারের কথা বলা যায় যা দিয়ে অনুর গঠন পর্যন্ত দেখা সম্ভব। এই মাইক্রোস্কোপে খুব সুক্ষ পিনের মত সুচাল টিপ আছে এবং তা যখন কোন পরিবাহী বস্তুর খুব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া বস্তুটির বাহিরের স্তরের অনুর চিত্র তৈরি করা হয়।
হয়, তখন তা থেকে টানেলিং নামে খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুত পরিবাহিত হয় এবং এই বিদ্যুতের পরিমাণ দিয়েই সেই ন্যানো প্রযুক্তি দুইটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় একটি হচ্ছে "বটম-আপ" এবং অন্যটি হচ্ছে "টপ- ডাউন"। বটম-আপ পদ্ধতিতে ন্যানো ডিভাইস এবং উপকরণগুলি আণবিক স্বীকৃতির নীতির উপর ভিত্তি করে আণবিক উপাদান দ্বারা তৈরি হয় এবং ইহারা রাসায়নিকভাবে একীভূত হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা হয়। টপ-ডাউন পদ্ধতিতে একটি ন্যানো উপকরণ পরমাণু স্তরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বৃহৎ সত্ত্বা হতে গঠিত হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়।
ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগক্ষেত্র-
দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় সকল ধরনের উপাদানেই এখন ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। যেমন-
১।রাসায়নিক শিল্প: সানস্ক্রিন এ ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির কাজে, বিভিন্ন জিনিসের প্রলেপ তৈরির কাজে, পানি বিশুদ্ধকরণের কাজে।
২। খাদ্যশিল্প: খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরির কাজে, খাদ্যে স্বাদ তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরিতে।
৩। চিকিৎসা ক্ষেত্রে: ঔষধ তৈরির আণবিক গঠনে যাতে রোগাক্রান্ত সেলে সরাসরি ঔষধ প্রয়োগ করা যায়।
৪। ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ খরচ, ওজন এবং আকৃতি কমিয়ে কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
৫। জ্বালানী তৈরিতে: হাইড্রোজেন আয়ন এর জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে।
৬। ব্যাটারী শিল্পে সৌর কোষ তৈরিতে প্রচলিত সৌর কোষের চাইতে আরও অধিক সাশ্রয়ী মূল্যের ন্যানোটেক সৌর কোষ তৈরিতে এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারী তৈরিতে।
৭। খেলাধুলা ও ক্রিয়া সরঞ্জাম তৈরিতে খেলাধূলার সামগ্রী যেমন- টেনিস বলের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য, বাতাসে গলফ বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য।
৮। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে: ভিডিও গেমস কনসোল এবং পার্সোনাল কম্পিউটারের মেমরি, গতি, দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন হার্ডওয়্যার তৈরিতে।