ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম (Data communication Media)
প্রেরণ প্রান্ত এবং দূরবর্তী গ্রহণ প্রান্তের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজন উভয় প্রান্তের মধ্যে সংযোগ। এই সংযোগকে সাধারণত চ্যানেল (Channel) বলা হয়। এই চ্যানেল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার মাধ্যম (Medium) ব্যবহার করা হয়। ডেটা চলাচলের এই মাধ্যমগুলোকেই কমিউনিকেশন মাধ্যম বলা হয়। ডেটা কমিউনিকেশন মাধ্যম দুই ধরনের দেখা যায়। যথা-
১। তার মাধ্যম (Wired): ক্যাবল বা তার, সাধারণ টেলিফোন, ফাইবার অপটিক লাইন ইত্যাদি।
২। তারবিহীন বা বেতার মাধ্যম: বেতার তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ভূ-উপগ্রহ ব্যবস্থা, ইনফ্রারেড ইত্যাদি।
নিম্নে কয়েকটি কমিউনিকেশন মাধ্যমের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হলো।
তার মাধ্যম (Wired): ক্যাবল (Cable)
ডেটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ক্যাবল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সাধারণত স্বল্প পরিসরের নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে হাইস্পিড ডেটা কমিউনিকেশনে বৃহত্তর পরিসরেও ক্যাবল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ক্যাবল বিভিন্ন ধরনের হয়। তবে নিম্নলিখিত ক্যাবলগুলোর বহুল ব্যবহার লক্ষ্যণীয়-
•কো-এক্সিয়াল ক্যাবল
• ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইত্যাদি।
•টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
কো-এক্সিয়াল ক্যাবল (Co-axial cable)
দু'টি পরিবাহী ও অপরিবাহী বা পরাবৈদ্যুতিক পদার্থের সাহায্যে এ ক্যাবল (তার) তৈরি করা হয়। ভেতরের পরিবাহীকে আচ্ছাদিত করার জন্য ও বাইরের পরিবাহী থেকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অপরিবাহী পদার্থ থাকে। বাইরের পরিবাহককে আবার প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা ঢেকে রাখা হয়। ভিতরের পরিবাহীটি সোজা রাখা হয়
এবং বাহিরের পরিবাহীটি চারদিক থেকে পেঁচানো থাকে। এ ধরনের ক্যাবলের ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে ডেটা ট্রান্সফার রেট তারের দৈর্ঘ্যের উপর
নির্ভর করে। সাধারণত কো- এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে এক কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে ডিজিটাল ডেটা প্রেরণ করা
যায়, এক্ষেত্রে ডেটা ট্রান্সফার রেট 200 Mbps (Megabits per second) পর্যন্ত হতে পারে এবং ট্রান্সমিশন লস্ অ কম হয়।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের সুবিধাসমূহ-
১. অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
২. এটি ফাইবার ক্যাবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।
৩. এর বাইরের দিকে বিদ্যুৎ-কুপরিবাহী আবরণের কারণে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা এ ক্যাবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ডেটা প্রেরণ সম্ভব।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ-
১. কো-এক্সিয়াল ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।
২. এই ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা বেশ কঠিন।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable)
দুটি পরিবাহী তারকে পরস্পর সুষমভাবে পেঁচিয়ে টুইস্টেড
Copper পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেঁচানো তার দুটিকে পৃথক core রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ক্যাবলে সাধারণত মোট ৪ জোড়া তার ব্যবহৃত হয়। প্রতি জোড়া তারের মধ্যে একটি সাধারণ বা কমন রংয়ের (সাদা) তার থাকে এবং অপর তারগুলো হয় ভিন্ন রংয়ের। তারসমূহ সংযোজনের সময় ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ নম্বরের ভিত্তিতে সংযোগ দিতে হয়। এ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে কোন ডেটা প্রেরণ করা যায় না। এছাড়াও ডেটা ট্রান্সফারের দূরত্ব বাড়তে থাকলে ডেটা ট্রান্সফার রেট কমতে থাকে। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের ট্রান্সমিশন লস অত্যন্ত বেশি। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল সাধারণত দুই প্রকারের হয়। যথা-
১। আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা ইউটিপি (Unshielded Twisted Pair-UTP)
২। শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা STP (Shielded Twisted Pair-STP)
আনশিন্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা ইউটিপি ক্যাবলের বিভিন্ন ধাপে উন্নয়ন ঘটেছে এবং বিভিন্ন ধরনের স্ট্যান্ডার্ডের প্রবর্তন হয়েছে। এসকল স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে দুটি খুব জনপ্রিয়। যথা- UTP Catagory-5 Catagory-61 বর্তমানে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে Catagory-5 ও Catagory-6 আনশিন্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল বা ইউটিপি ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। Catagory-6 ক্যাবল। গিগাবাইট রেঞ্জের ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের সুবিধাসমূহ-
১. অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। ২ . কম দূরত্বে ডেটা প্রেরণের জন্য এটি সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়বহৃল পদ্ধতি।
৩. টেলিফোন সিস্টেমে ব্যবহৃত টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল এর মধ্য দিয়ে সিগন্যাল কোন রকম পরিবর্তন
ছাড়াই বেশ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
৪. সহজেই স্থাপন করা যায়।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ-
১. নয়েজ সিগন্যাল দ্বারা সহজে প্রভাবিত হওয়ার কারণে যোগাযোগ দূরত্ব বেশি হলে ভুলের মাত্রা (error rate) বেড়ে যায়।
২. গঠন পাতলা হওয়ার কারণে সহজেই
ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. ট্রান্সমিশন লস (Loss) অপেক্ষাকৃত বেশি।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল
(Fiber optic cable) অপটিক্যাল ফাইবার হলো ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ দিয়ে তৈরি এক ধরনের আঁশ-যা আলো নিবন্ধকরণ ও পরিবহনে সক্ষম। ভিন্ন প্রতিসরাংকের এই ধরনের ডাই- ইলেকট্রিক দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার গঠিত। ফাইবার অপটিকের তিনটি অংশ থাকে। যথা-
১। কোর: ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক কোর যার ব্যাস ৮ থেকে ১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে।
২। ক্ল্যাডিং: কোরকে আবদ্ধ করে থাকা বাইরের ডাই-ইলেকট্রিক আবরণ ক্ল্যাডিং নামে পরিচিত। কোরের প্রতিসরাংক ক্ল্যাডিংয়ের প্রতিসরাংকের চেয়ে বেশি থাকে।
৩। জ্যাকেট: আবরণ হিসাবে কাজ করে।
ফাইবার অপটিকের বৈশিষ্ট্য হলো-
-কমিউনিকেশন সিস্টেমস ও নেটওয়ার্কিং এটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।
-এতে আলোকের পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন করে।
-রেঞ্জ বা তার চেয়ে বেশি গতিতে ডেটা চলাচল করতে পারে।
-এতে গিগাবাইট নেটওয়ার্কের ব্যকবোন হিসাবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক ব্যবহৃত হয়।
ফাইবারের গঠন উপাদান
ফাইবার তৈরির অন্তরক পদার্থ হিসাবে সিলিকা এবং মাল্টি কমপোনেন্ট কাঁচ বহুলভাবে ব্যবহার করা যায়। এসব অন্তরক পদার্থের গুণগত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো-
•অতি স্বচ্ছতা
• রাসায়নিক সুস্থিরতা বা নিষ্ক্রিয়তা
•সহজ প্রক্রিয়াকরণ যোগ্যতা।
ফাইবার তৈরির জন্য সোডা বোরো সিলিকেট, সোডা লাইম সিলিকেট, সোডা অ্যালুমিনা সিলিকেট ইত্যাদি মাল্টি কম্পোনেন্ট কাঁচগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও ফাইবারের ক্ল্যাডিং হিসেবে প্লাষ্টিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে পূর্ণ প্লাষ্টিক ফাইবারের ব্যবহারও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হচ্ছে অতিরিক্ত ক্ষয় (Loss)। সাধারণ কাঁচ ফাইবার তৈরির জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। কারণ এর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি কিছু দূর যেতে না যেতেই নিঃশেষ হয়ে যায়। তাছাড়া সাধারণ কাঁচ দূর থেকে স্বচ্ছ মনে হলেও অপটিক্যাল কমিউনিকেশনের জন্য যতটা স্বচ্ছতা দরকার ঠিক ততটা নয়।
ফাইবারের সুবিধাসমূহ
বিভিন্ন ধরনের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
•এ আলোর গতিতে ডেটা স্থানান্তরিত হয় এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতি সম্পন্ন
•উচ্চ ব্যান্ডউইডথ
•আকারে ছোট এবং ওজন অত্যন্ত কম
•শক্তি ক্ষয় করে কম
•বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত
•ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা
•এ সঠিকভাবে ডেটা স্থানান্তর বা চলাচলের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা কোন বাঁধা প্রদান করতে পারে না।
ফাইবারের অসুবিধাসমূহ
অপটিক্যাল ফাইবারে উল্লেখযোগ্য অসুবিধাসমূহ হলো-
■ ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে । আকারে বাঁকানো যায় না তাই যেখানে অধিক বাঁকানোর প্রয়োজন হয় না সেখানেই অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা সম্ভব।
□ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল
■ অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন হয়।
ফাইবারের প্রকারভেদ
ফাইবারের গাঠনিক উপাদানের প্রতিসরাংকের উপর ভিত্তি করে ফাইবারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
১। স্টেপ ইনডেক্স ফাইবার (Step-index fiber)
২। গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবার (Graded-index fiber) ও
৩। মনোমোড ফাইবার (Monomode fiber)
স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাংক সর্বত্র সমান থাকে। গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবারের কোরের প্রতিসরাংক কেন্দ্রে সবচাইতে বেশি এবং ইহার ব্যাসার্ধ বরাবর কমতে থাকে। কোরের প্রতিসরাংকের ভিন্নতার জন্য এ দুই ধরনের ফাইবারের আলোক রশ্মির গতিপথও ভিন্ন হয়। গ্রেডেড ইনডেক্স ফাইবারের তুলনায় স্টেপ ইনডেক্স ফাইবারের কোরের ব্যাসার্ধ বেশি।
তারবিহীন মাধ্যম (Wireless Media)
কোনো ধরনের মাধ্যম ছাড়া যখন প্রেরক ও গ্রাহকযন্ত্রের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয় তখন তাকে তারবিহীন বা ওয়্যারলেস মিডিয়া বলে। এটি সম্ভব হয় কারণ বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এই তরঙ্গের কম্পন যত বেশি হবে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য তত কম হবে। এই স্পেকট্রামের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা অংশ আমরা দৃশ্যমান আলো হিসেবে দেখতে পাই। এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক (বিদ্যুৎ-চুম্বকীয়) স্পেকট্রামের দুইটি ক্ষেত্র কমিউনিকেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সে দুইটি হলো,
•রেডিও ওয়েভ (Radiowave), এবং
•মাইক্রোওয়েভ (Microwave)!
•ইনফ্রারেড ওয়েড (Infrared wave)
রেডিওওয়েভ (Radio wave)
3 কিলোহার্টজ থেকে 300 গিগাহার্টজের মধ্যে সীমিত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামকে রেডিও ওয়েভ বলা হলেও কমিউনিকেশনের আয়োনোস্ফিয়ার প্রেক্ষিতে সাধারণত 10 কিলোহার্টজ থেকে 1 গিগাহার্টজকে (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 30km থেকে 30 cm) রেডিও ওয়েবভিত্তিক কমিউনিকেশন বলে বিবেচনা করা হয়। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি হলে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল চারিদিকে ছড়িয়ে যায়, তাই ব্রডকাস্টের বেলায় রেডিও ওয়েভ বেশি ব্যবহার হয়। রেডিও, ট্রান্সমিটার এ্যান্টেনা, পৃথিবী রিসিভিং এ্যান্টেনা ।
ওয়েভ পাঠানোর জন্য যে এন্টেনার প্রয়োজন হয় তার দৈর্ঘ্য তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আনুমানিক চার ভাগের এক ভাগ হতে হয়। সে কারণে কম ফ্রিকোয়েন্সির (বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের) রেডিও ওয়েব খুব বাস্তবসম্মত নয়। রেডিও ওয়েভ বায়ুমন্ডলে খুব বেশি শোষিত হয় না, ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিল্ডিংসহ পাহাড়-পর্বত কিংবা অন্যান্য বাঁধা অতিক্রম করতে পারে। রেডিও ওয়েভ বায়ুমন্ডলের আয়োনোস্ফিয়ার থেকে প্রতিফলিত হয় বলে এটি পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পাঠানো সম্ভব। এজন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘরে ও বাইরে ব্যাপকভাবে রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মাইক্রোওয়েভ (Microwave):
মোটামুটিভাবে 1 গিগাহার্টজ হতে 100 গিগাহার্টজের ভিতরে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডকেই মাইক্রোওয়েভ বলে। এ ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ সাধারণত 2 গিগাহার্টজ বা তার অধিক ফ্রিকোয়েন্সিতে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে। এটি রেডিও ওয়েভের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে না, সোজাসুজি যায়। তাই এই কমিউনিকেশনের জন্য ট্রান্সমিটার এন্টেনা ও রিসিভার এন্টেনাকে মুখোমুখি থাকতে হয় বা সংযোগ লাইন অব সাইট (LOS: Line of site) অবলম্বন করতে হয়। মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম মূলত দুটি ট্রান্সসিভার (Transceiver) নিয়ে গঠিত হয়, যার একটি সিগন্যাল পাঠায় অন্যটি গ্রহণ করে।
মাইক্রোওয়েভে যোগাযোগ দুধরনের হয়ে থাকে:
১.টেরিস্ট্রিয়াল (Terrestrial) বা ভূপৃষ্ঠে মাইক্রোওয়েভ সংযোগ এবং
২. স্যাটেলাইট (Satellite) বা ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ সংযোগ।
টেরিস্ট্রিয়াল (Terrestrial):
সাধারণত যে সব জায়গায় ক্যাবল ব্যবহার করার অনুপযোগী সে সব স্থানে টেরিস্ট্রিয়াল ট্রান্সমিটার বসানো হয়। মাইক্রোয়েভ সংকেতের মধ্যে বাঁধা থাকলে ডেটা স্থানান্তর হয় না, তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন এবং সুষ্ঠু করার জন্য সাধারণত বড় টাওয়ার, উঁচু ভবন বা পাহাড়ে এ টেরিস্ট্রিয়াল ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার বসানো হয়ে থাকে। ভূপৃষ্ঠের অসমতল এলাকা কিংবা গাছপালা, ভবন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এ ধরনের ট্রান্সমিশনে প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর পর রিপিটার বা রিলে স্টেশন বসাতে হয়।
স্যাটেলাইট (Satellite)
মাইক্রোওয়েভ বায়ুমন্ডলের আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে যেতে আসতে পারে বলে কৃত্রিম উপগ্রহের (Artificial Satellite) মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভে সিগন্যাল আদান-প্রদান করা শুরু হয়। একটি স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৪০০০ কিমি উর্ধ্বাকাশে স্থাপিত করা হলে সেটি জিওস্টেশনারি হয়, অর্থাৎ পৃথিবীর অক্ষে ঘূর্ণনের সমান গতিতে এই স্যাটেলাইট পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে। পৃথিবী থেকে তখন এই স্যাটেলাইটকে আকাশের নির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থির মনে হয়। সেজন্য ভূমিতে স্থাপিত VSAT (Very Small Apeture Terminal) কে একটি নির্দিষ্ট দিকে আকাশমুখী করে স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু-১ একটি জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট এবং গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে এন্টেনাগুলো নেটওয়ার্ক হাব এপার্টমেন্ট গ্যাস স্টেশন ইন্টারনেট অফিস কর্পোরেট বাসা অফিস আকাশের সেই বিন্দুর দিকে মুখ করে স্থাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী টি.ভি. চ্যানেলগুলোর সরাসরি সম্প্রচার, প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান এবং আবহাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণে স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
ইনফ্রারেড ওয়েড (Infrared wave)
উইলিয়াম হার্শেল ১৮০০ সালে ইনফ্রারেড বিকিরণ আবিষ্কার করেন। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের ৩০০ গিগাহার্জ (GHz) থেকে ৪৩০ টেরাহার্জ (THz) পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সী ব্যান্ড ইনফ্রারেড ওয়েভ নামে পরিচিত। অন্যভাবে বললে, যে সকল তড়িৎ চৌম্বক বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সীমা ১ মাইক্রোমিটার থেকে ১ মিলিমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত তাদের বলা হয় ইনফ্রারেড ওয়েভ বা অবলোহিত বিকিরণ রশ্মি। এই বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষা সামান্য বড় কিন্তু মাইক্রোওয়েভ থেকে ছোট। খালি চোখে এদের দেখা যায় না।
টিভি, সিডি প্লেয়ার, মিউজিক সিস্টেমসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রের রিমোট কন্ট্রোলে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মি ব্যবহার করা হয়। ইনফ্রারেড যোগাযোগ পদ্ধতিতে প্রেরক প্রান্তে একটি এলইডি বা লাইট এমিটিং ডায়োড (Light Emitting Diode-LED) থাকে যা ইনফ্রারেড সংকেতকে ট্রান্সমিট করে অদৃশ্য আলোতে রূপান্তর করে। গ্রাহক প্রান্তে একটি ফটোডায়োড থাকে যা প্রেরক প্রান্ত থেকে প্রেরণ করা অদৃশ্য আলো সনাক্ত করে রিসিভারের ইলেকট্রনিক সার্কিটের সাহায্যে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে।
Transmitter with LED , রেডিও, টিভি, এয়ার কন্ডিশন ইত্যাদির রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমে গাড়ীর দরজা, জানালা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটারের তারবিহীন কী-বোর্ড, মাউস, প্রিন্টার ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার কাজে
স্মার্ট হোমের পরিবেশ (দরজা, জানালা, গ্যারেজ, লাইট, ফ্রিজ, ওভেন ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণ করতে।
খেলনা সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ করতে।
ইনফ্রারেড প্রযুক্তির সুবিধা-
-তুলনামূলকভাবে দামে সস্তা।
-খুব কম বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
-স্বল্প দূরত্বে (প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত) ভাল কাজ করে। সীমিত ব্যান্ডউইডথ্ এ কাজ করে; ১১৫ kbps
ইনফ্রারেড প্রযুক্তির অসুবিধা-
-অধিক দূরত্বে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে না।
-আলোক রশ্মি, ধূলাবালি, বর্ষা ও কুয়াশা ডেটা ট্রান্সমিশনে প্রভাব ফেলতে পারে।
-ট্রান্সমিটার ও রিসিভার সরলরেখা বরাবর কাজ করে। "Line of sight" ছাড়া বাঁকা পথে বা বাঁধাপ্রাপ্ত হলে কাজ করে না