Genetic Engineering (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং)

0

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)


প্রাণী বা উদ্ভিদ জীবের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ (Cell)। কোষের প্রাণকেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস (Nucleus) বলা হয়। এই নিউক্লিয়াসের ভিতরে বিশেষ কিছু পেঁচানো বস্তু আছে যাকে বলা হয় ক্রোমোজোম (Cromosome)। ক্রোমোজোম জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। ক্রোমোজোমের মধ্যে আবার চেইনের মত পেঁচানো কিছু বস্তু থাকে যাকে ডিএনএ (DNA- Deoxyribo Nucleic Acid) বলা হয়। এই ডিএনএ অনেক অংশে ভাগ করা থাকে। এর এক একটি নির্দিষ্ট অংশকে বলে জীন (Gene)। মূলতঃ ক্রোমোজোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত জীনই জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মানুষের শরীরের ২৩ জোড়া ক্রোমজোম রয়েছে এবং বিড়ালের রয়েছে ৩৪ জোড়া। আর মশার আছে ৬ জোড়া। এদের মধ্যে এক জোড়া ক্রোমজোম বংশগতির বাহক। আমাদের শরীরে প্রায় ৩০০০০০ জীন রয়েছে। এক সেট পূর্ণাঙ্গ জীনকে জিনোম (genome) বলা হয়।


বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে কোন প্রাণীর জিনোমকে (genome) নিজের সুবিধানুযায়ী সাজিয়ে নেয়াকেই

Chromosome জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জেনেটিক

Nucleus মডিফিকেশন বলে। জিনোম হলো কোন জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের তথ্য। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে কখনও কখনও প্রাণীর বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত ডিএনএ সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে অথবা প্রাণীদেহের বাইরে প্রস্তুতকৃত ডিএনএ Cell, DNA প্রাণীদেহে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে প্রাণীর জেনিটিক গঠনের পরিবর্তন ঘটানো হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জেনিটিক ম্যাটেরিয়াল এর নতুন সমাবেশ তৈরির জন্য Recombinant Nucleic Acid (DNA or RNA) পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। জেনিটিক ম্যাটারিয়াল এর নতুন সমাবেশ পরোক্ষভাবে ভেক্টর সিস্টেম প্রয়োগ করে অথবা প্রত্যক্ষভাবে micro-injection, macro- injection এবং micro-encapsulation পদ্ধতি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়।


জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে প্রজনন ছাড়া ডিএনএ এর নতুন সিকুয়েন্স বা পর্যায়ক্রম তৈরির প্রক্রিয়া ১৯৭০ সাল থেকে শুরু হয়। Jack Williamson তার সায়েন্স ফিকশন নোভেল Dragon's Island -এ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।


জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৭২ সালে Paul Berg বানরের ভাইরাস SV40 ও lambda virus-এর ডিএনএ এর সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বের প্রথম recombinant ডিএনএ অণু তৈরি করেন। E. Coli ব্যাকটেরিয়ার প্লাসমিডের মধ্যে এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স জীন (antibiotic resistance genes) প্রবেশ করানোর মাধ্যমে Herbert Boyer এবং Stanley Cohen ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেন। এর এক বছর পর Rudolf Jacnisch জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে একটি ট্রান্সজেনিক ইঁদুর তৈরি করেন যা বিশ্বের প্রথম ট্রান্সজেনিক



Herbert Boyer এবং Robert Swanson ১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রথম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি "Genetech" প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক বছর পর "Genetech" E. Coli ব্যাকটেরিয়া থেকে মানব প্রোটিন somatostatin উৎপাদন করে যা হিউম্যান ইনসুলিন হিসেবে সুপরিচিত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে চীন ভাইরাস প্রতিরোধকারী তামাক গাছের প্রবর্তনের মাধ্যমে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদকে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক রূপ দান করে।


চিকিৎসা, গবেষণা, শিল্প, এবং কৃষিসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ইনসুলিন, হিউম্যান গ্রোথ হরমোন, follistim (বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য), হিউম্যান অ্যালবুমিন, ভ্যাক্সিন এবং অনেক প্রকারের ঔষধ উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও genetically modified ইঁদুর দিয়ে মানবদেহের বিভিন্ন রোগসংক্রান্ত গবেষণা চালানো হয়। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য genetically modified শুকর শাবক উৎপাদন করা হয়েছে।


প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের কাছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রাণীর জীন ও অন্যান্য জেনেটিক তথ্য genetically modified ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়াও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীনের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আণুবীক্ষণিক জীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, অথবা ইনসেক্ট ম্যামালিয়ান


সেল ইত্যাদি থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করা যায়। Genetically modified crops এবং Genetically Modified Organism বা GMO হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি বিতর্কে বিষয়। তবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলতঃ কৃষিকে ঘিরেই বেশি পরিচালিত হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কৃষিতে Genetically modified crops উৎপাদনের লক্ষ্য চারটি। যথা-


(১) পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে শস্যকে রক্ষা করা,


(২) শস্য থেকে সম্পূর্ণ নতুন উপাদান উৎপাদন করা,


(৩) শস্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা, এবং 


(৪) শস্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

নিম্নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জীবন পরিবর্তনের মূলনীতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো। যথা-


ধাপ-১: সর্বপ্রথমে যেই জিনটি দ্বারা একটি জীবের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা হবে তাকে আলাদা করা হয়। 

ধাপ-২: একটি DNA এর জিন অন্য একটি জিনে প্রতিস্থাপন দুইটি উপায়ে করা যায়। প্রথমতঃ কোন নিয়ম না মেনে দৈবচয়নভাবে জিনটিতে প্রতিস্থাপন করা হয় আর দ্বিতীয়তঃ DNA টি একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। তাপ ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে একটি DNA কে একটি ব্যাকটেরিয়া কোষে ঢোকানো যায়।


ধাপ-৩: বিভিন্ন প্রাণীতে DNA সমূহ সাধারণতঃ মাইক্রো ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করানো হয়।


ধাপ-৪: যেই DNA নতুন জিনকে তৈরি করবে তাকে একটি ব্যাকটেরিয়াতে রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর সো ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের মধ্যে এক ধরনের টিউমার তৈরি করবে এবং তা থেকে প্রাকৃতিকভাবে নতুন GM (Genetically Modified Organism) তৈরি হবে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)