Biometrics (বায়োমেট্রিক্স)

0


বায়োমেট্রিক্স (Biometrics) 

গ্রীক শব্দ "bio" (life) ও "metric" (to measure) থেকে উৎপত্তি হয়েছে বায়োমেট্রিক্স (Biometrics)। বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোন ব্যক্তির দেহের গঠন এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তাকে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানে বায়োমেট্রিক্সকে ব্যক্তি সনাক্তকরণ এবং কোন সিস্টেমে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বায়োমেট্রিক্স ডিভাইসগুলো ব্যবহারকারীদের কোন প্রোগ্রাম, সিষ্টেম বা কক্ষ ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে থাকে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একটি দল হতে কাউকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার কাজেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।


বায়োমেট্রিক্সের প্রকারভেদ


দেহের গঠন এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা- (ক) দেহের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের বায়োমেট্রিক পদ্ধতি


১. ফিংগার প্রিন্ট (Fingerprint)


২ . হ্যান্ড জিওমিট্রি (Hand geometry)


৩ . আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান (Iris and retina scan)


৪. ফেইস রিকোগনিশন (Face recognition)


৫. ডিএনএ (DNA)

 

(খ )আচরণগত বৈশিষ্ট্যর বায়োমেট্রিক পদ্ধতি


১. ভয়েস রিকগনিশন (Voice recognition)


২. সিগনেচার ভেরিফিকেশন (Signature verification)


৩. টাইপিং কীস্ট্রোক (Keystroke verification)


একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে ডিজিটাল কোডে রূপান্তর করে এবং এই কোডকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে তুলনা করে। যদি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত কোড কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে মিলে যায় তবে তাকে ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেয় বা তাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।


বায়োমেট্রিক্সের কাজ: 

বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি কোন ব্যক্তি সনাক্তকরণ (Identification) এবং তার সত্যাসত্য নির্ধারণ (Verification) কাজে ব্যবহার করা হয়।


(ক) ব্যক্তি সনাক্তকরণ (Identification) কাজ:


বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তিতে ব্যক্তির অদ্বিতীয় কোন বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করে তা ঐ ব্যক্তির নামের বিপরীতে সিস্টেমের কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সিস্টেমের প্রসেসিং ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি প্রয়োজন হয় যাতে সময়মত অনেক ব্যক্তির রেকর্ডের সংগ্রহ থেকে সহজেই কাংঙ্খিত কোন ব্যক্তির রেকর্ড খুজে বের করা যায়।


গতানুগতিক পদ্ধতিতে টোকেন নির্ভর সনাক্তকরণ পদ্ধতি যেমন: লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় এবং জ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতিতে ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মানুষের কোন অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সনাক্তকরণ (Identification) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যা টোকেন নির্ভর বা জ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।


(খ) ব্যক্তির সত্যাসত্য নির্ধারণ (Verification) কাজ:


এই পদ্ধতিতে পূর্বে থেকেই কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে সংরক্ষিত মানুষের কোন অদ্বিতীয় এক বা একাধিক বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে পরীক্ষাধীন ব্যক্তির বর্তমান বায়োমেট্রিক ডেটার তুলনা করে ঐ ব্যক্তির সত্যাসত্য নির্ধারণ করা হয়। গতানুগতিক এবং জ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতিতে একজন ব্যক্তিকে তার লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড ইত্যাদি বহন করতে হয় এবং ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর মনে রাখতে হয়। বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে অধিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সিষ্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। নিম্নে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


ফিংগার প্রিন্ট রিডার (Fingerprint reader) সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষের

আঙ্গুলের ছাপে ভিন্নতা দিয়েছেন। মানুষের

আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসই অদ্বিতীয় অর্থাৎ একজন

মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসই অন্য কোন

মানুষের আঙ্গুলের ছাপের বা টিপসইয়ের সাথে

মিলবে না। ফিংগার প্রিন্ট রিডার হচ্ছে বহুল

ব্যবহৃত একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস যার সাহায্যে

মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইকে ইনপুট

হিসাবে গ্রহণ করে তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সাথে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফিংগার প্রিন্ট বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পূর্বেই ব্যবহারকারীর আঙ্গুলের ছাপ ডেটাবেজে সংরক্ষণ করতে হয়। পরবর্তীতে এই রিডার আঙ্গুলের নিচের অংশের ত্বককে রীড করে সংরক্ষিত ছাপের সাথে তুলনা করে। রিডারটি ত্বকের টিস্যু এবং ত্বকের নীচের রক্ত সঞ্চালনের উপর ভিত্তি করে ইলেকট্রোমেগনেটিক পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। বর্তমানে বাজারে এক্সটারনাল ফিংগার প্রিন্ট রিডার বেশি দেখা যায় যা কম্পিউটারের ইউএসবি পোর্টের সাথে সংযোগ দেওয়া হয়। তবে কিছু নতুন কী-বোর্ড, নোট বুক বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে ফিংগার প্রিন্ট রিডার যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ফিংগারপ্রিন্ট রিডারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা কোন প্রোগ্রাম বা ওয়েব সাইটে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে লগ-অন করতে পারে। কোন সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে মূলতঃ ফিংগার প্রিন্ট রিডার ব্যবহৃত হয়। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত প্রমাণ এবং ডিএনএ সনাক্ত করার কাজেও ফিংগার প্রিন্ট ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহারে খরচ তুলনামূলক কম হয় এবং সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।

ফেইস রিকোগনিশন (Face recognition) 

একজন মানুষের মুখমন্ডলের সাথে অন্য কোন মানুষের মুখমন্ডলের হুবহু মিল দেখা যায় না। সৃষ্টিকর্তা মানুষের মুখমন্ডলের ভিন্নতা দিয়েছেন। মানুষের মুখমন্ডল সনাক্তকরণ বা ফেইস রিকোগনিশন সিস্টেম হচ্ছে এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যার সাহায্যে মানুষের মুখের গঠন প্রকৃতি পরীক্ষা করে তাকে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কোন ব্যবহারকারীর সরাসরি মুখের ছবিকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছবির সাথে তুলনা করা হয়। এখানে দুই চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য এবং ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়। কোন বিল্ডিং বা কক্ষের প্রবেশদ্বারে এবং কোন আইডি নম্বর সনাক্তকরণে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়। ফেইস রিকোগনিশন সিষ্টেম সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে যেমনঃ চুলের স্টাইল পরিবর্তন, মেকআপ ব্যবহার, গহনা ব্যবহার এবং ক্যামেরায় আলোর পার্থক্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। O


হ্যান্ড জিওমিট্রি (Hand geometry)


মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। হ্যান্ড জিওমিট্রি পদ্ধতিতে বায়োমেট্রিক ডিভাইস দ্বারা মানুষের হাতের আকৃতি বা জ্যামিতিক গঠন ও সাইজ নির্ণয়ের মাধ্যমে মানুষকে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে হ্যান্ড জিওমিট্রি রিডার একই সাথে ৩১,০০০ এর বেশি পয়েন্ট এবং ৯০টির বেশি আলাদা আলাদা পরিমাপ পরীক্ষা করতে পারে। এখানে হাতের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, পূরত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর হাতটি রিডারের নির্দিষ্ট স্থানে রাখার পর বায়োমেট্রিক ডিভাইস ৫ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে ডেটাবেজে সংরক্ষিত মানের সাথে প্রাপ্ত মানের পরীক্ষা করে ফলাফল প্রদান করে থাকে।


বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবীদের উপস্থিতি নির্ণয়ে, বিল্ডিং বা কক্ষের প্রবেশদ্বারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি, বিভিন্ন ডেটা সেন্টার, আদালতে আসামী সনাক্তকরণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে হ্যান্ড জিওমিট্রি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকারীদের জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ, কারণ হাতটি একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ব্যতিত কোন কিছুই করার প্রয়োজন হয় না। হ্যান্ড জিওমিট্রি ডিভাইসগুলির দাম তুলনা মূলকভাবে বেশি এবং ইন্সটলেশন খরচও বেশি।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)