বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics)
বায়োইনফরমেটিক্স একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র যা জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত ডেটার সংরক্ষণ, আহরণ, সাজানো এবং বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির আবিষ্কার এবং উন্নয়ন করে। বায়োইনফরমেটিক্স এর একটি প্রধান কাজ হচ্ছে জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞানকে বিকশিত করার জন্য সফট্ওয়্যার সামগ্রী তৈরি করা। অন্যভাবে বলা যায় যে, "Bioinformatics is the application of computer technology to the management of biological information" (জীব সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রয়োগই হলো বায়োইনফরমেটিক্স)। জীববিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রেই বায়োইনফরমেটিক্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীববিজ্ঞানের আণবিক পরীক্ষায় বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান, গণিত শাস্ত্র এবং প্রকৌশল বিদ্যায় বায়োলজিক্যাল ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হয়।
জৈব তথ্যকে সাজিয়ে গুছিয়ে সংরক্ষণ করার জন্য শক্তিশালী ডেটাবেজ এবং ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। জৈব তথ্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence), সফট কম্পিউটিং, ডেটা মাইনিং, ইমেজ প্রসেসিং সিমুলেশন ইত্যাদি অ্যালগরিদমে ব্যবহৃত হয়। বায়োইনফরমেটিক্স পদ্ধতিতে সফটওয়্যার টুলস হিসাবে Java, C#, XML, Perl, C, C++, Python, R, SQL, CUDA, MATHLAB, Spread Sheet Analysis ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তথ্য প্রেরণ, আহরণ এবং জৈব সিস্টেম প্রক্রিয়াকরণের গুরুত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৮ সালে "Paulien Hogeweg" নামের একজন গবেষক তথ্য প্রক্রিয়াকরণে জীবন সম্পর্কিত সিস্টেম গবেষণায় বায়োইনফরমেটিক্স শব্দটি ব্যবহার করেন। ইহা প্রাণপদার্থ বিদ্যা (Biophysics) এবং প্রাণরসায়ন (Biochemistry) এর সাথে সমান্তরাল ক্ষেত্র হিসাবে স্থাপিত হয়। বায়োইনফরমেটিক্স এর গোড়ার দিকের "Elvin A. Kabat" নামের একজন গবেষক ১৯৮০ থেকে ১৯৯১ এর মধ্যে তার অ্যান্টিবডি সম্পর্কিত ধারাবাহিক প্রকাশনায় জৈব অনুক্রম বিশ্লেষণের প্রবর্তন করেন। "ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন" এর পরিচালক "David Lipman" এই ক্ষেত্রের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ অগ্রদূত "Margaret Oakley Dayhaff" কে তার অবদানের জন্য বায়োইনফরমেটিক্স এর পিতা-মাতা হিসাবে অভিহিত করেছিলেন। জৈবিক তথ্য যেমন নিউক্লিওটাইড ক্রম এবং অ্যামিনো এসিড ক্রম সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ডেটাবেজ তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য "genomic revolution" এর শুরুর দিকে বায়োইনফরমেটিক্স শব্দটিকে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ডেটাবেজের উন্নয়ন ছিল একটি জটিল ইন্টারফেস যার মাধ্যমে গবেষকগণ বিদ্যমান ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে এবং উন্নয়নের জন্য পাশাপাশি নতুন সংশোধিত তথ্যও জমা দিতে পারে।
বায়োইনফরমেটিক্স এর উদ্দেশ্য এবং ব্যবহার:
স্বাভাবিক সেলুলার কার্যক্রম বিভিন্ন রোগের মধ্যে কিভাবে রদবদল হয় তা গবেষণা করার লক্ষ্যে জৈব তথ্য সম্বলিত এইসব কার্যক্রমের একটি ডায়াগ্রাম গঠন করা আবশ্যক ছিল। সে লক্ষ্যে বায়োমেট্রিক্স ক্ষেত্র বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যাকে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হিসাবে গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিওটাইড এবং অ্যামিনো অ্যাসিডক্রম, প্রোটিনের গঠন এবং প্রোটিনের কাজ। বায়োইনফরমেটিক্স এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো জৈবিক প্রক্রিয়ার অনুধাবন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে অন্যান্য পন্থার পরিবর্তে কম্পিউটারের সাহায্যে এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে ইহার উন্নয়ন এবং প্রয়োগ ঘটানো। প্যাটার্ন রিকোগনিশন, ডেটা মাইনিং, মেশিন ল্যাংগুয়েজ অ্যালগরিদম, ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে বায়োইনফরমেটিক্স ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য গবেষণাগুলির মধ্যে রয়েছে সিকুয়েন্স এলাইনমেন্ট, ডিএনএ ম্যাপিং, ডিএনএ এনালাইসিস, জিন ফাইন্ডিং, জিনোম সমাগম, ড্রাগ নকশা, ড্রাগ আবিষ্কার, প্রোটিনের গঠন, প্রোটিনের ভবিষ্যত গঠন, জিন সূত্রের ভবিষ্যত, প্রোটিন-প্রোটিনের মিথষ্ক্রিয়া, জিনোম এর ব্যাপ্তি এবং বিবর্তনের মডেলিং ইত্যাদি।
বায়োইনফরমেটিক্স এর সফ্টওয়্যার সামগ্রী:
বিভিন্ন বায়োমেটিক্স কোম্পানি বায়োমেট্রিক্স সফটওয়্যার হিসাবে খুবই জটিল গ্রাফিক্যাল প্রোগ্রাম এবং স্বতন্ত্র ওয়েব সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে অনেক ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার রয়েছে। জৈব তথ্য বিশ্লেষণের জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অ্যালগরিদমের প্রয়োজন হচ্ছে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থাকার ফলে গবেষকরা খুব সহজেই তাদের গবেষণায় নতুন নতুন অ্যালগরিদম তৈরি করতে পারছে এবং তাদের গবেষণায় নতুন নতুন সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারকে যেহেতু বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে শেয়ার করা যায় এবং নিজের মতো করে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যায় তাই সহজেই ইহাকে জৈব তথ্যের সাথে একীভূত করা সম্ভব হয়। ওপেনসোর্স বায়োইনফরমেটিক্স সফটওয়্যার হিসাবে Bioconductor, BioPerl, Biopython, BioJava, BioRuby, Biclipse, EMBOSS, Taverna Workbench, UGENE ইত্যাদি এবং বিভিন্ন প্রকার ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। ওপেনসোর্স এর রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেন বায়োইনফরমেটিক্স ফাউন্ডেশন ২০০০ সাল থেকে বায়োইনফরমেটিক্স ওপেন সোর্স কনফারেন্স (BOSC) এর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।